অগ্রদৃষ্টি-ডেস্ক: কতো হবে বাচ্চাটার বয়স? এক বছর? অথবা তার চেয়ে একটু বেশি? বুকে ভর দিয়ে মুখ লুকিয়ে শুয়ে আছে চুপ করে। বেশি ছোট বাচ্চারা তো এভাবেই ঘুমায়। এ বাচ্চাটাও ঘুমাচ্ছে। কিন্তু এমনই সে ঘুম, যা থেকে সে আর কখনো জেগে উঠতে পারবে না।
সাগরতীরে শুয়ে আছে শিশুটির প্রাণহীন দেহ। ঢেউগুলো চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে তাকে হয়তো জাগানোর চেষ্টা করছে।
এই শিশুটি সেই ১২ সিরিয়ান শরণার্থীর একজন, যারা সমুদ্রপথে ইউরোপ আসার পথে ডুবে মারা যায়। তারা দু’টি ডিঙি নৌকায় করে গ্রিক দ্বীপ কোস-এর উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছিলো। ছেলেটির মৃতদেহ তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসে।
তীরে পড়ে থাকা শিশুটির মৃতদেহ এবং তার দিকে এগিয়ে আসা এক উদ্ধারকর্মীর এই ছবিটি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ঝড় তুলেছে। বর্তমান সভ্যতাকে নতুন অর্থ দেওয়া নিয়ে এই ছবিটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নিজ নিজ স্বার্থে বিশ্ব নেতারা কতো সাধারণ মানুষের প্রাণ ঝুঁকিতে ফেলছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এর আগে বলেছেন, শরণার্থীরা যুক্তরাজ্যে ‘ঝাঁকে ঝাঁকে’ আসছে এবং তার দেশে আর কোনো শরণার্থীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে পররাষ্ট্র সচিব ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, শরণার্থীরা যুক্তরাজ্যে ‘লুটতরাজ’ চালাচ্ছে। ব্রিটিশদের এমন আচরণকে লজ্জাকর বলে অভিহিত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সিরিয়ান শিশুটির মৃতদেহের ছবি দেখেও মন গলেনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আর শরণার্থী না নেওয়ার ক্ষেত্রে আগের অবস্থানেই আছেন তিনি।
ব্রিটিশ দৈনিক দি ইনডিপেন্ডেন্ট ছবিটি পোস্ট করে প্রশ্ন রেখেছে, এই অসামান্য শক্তিশালী ছবিটিও যদি শরণার্থীদের প্রতি ইউরোপের মনোভাব পাল্টাতে না পারে, তাহলে কী পারবে?
মানুষের মনে আলোড়ন সৃষ্টি এবং ইইউ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ওই ছবিটি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করা হয়। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, ইইউ নেতারা শরণার্থীদের ইউরোপে আগমন ঠেকাতে যতো বেশি কঠোর হচ্ছেন, ততো বেশি শরণার্থী প্রাণ দিচ্ছে সাগর বুকে। একই ধরনের আরো কয়েকটি ছবিও শেয়ার করা হয়েছে।
ছবিটি বিশ্ব বিবেককে প্রশ্ন করে, সত্যিই কি মনুষ্যত্ব বলে কিছু আছে?